সৃষ্টি জগতের শুরু নিয়ে কোরআন ও বিজ্ঞান।


 






পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

লেখার বিষয়:- সৃষ্টি জগতের শুরু নিয়ে কোরআন ও বিজ্ঞান। 


📝লেখকঃ Shohedul Islam Sajjad


আজ থেকে ১৩.৮বিলিয়ন(১৩০০কোটি) বছর আগের কথা!কোথাও কোন কিছু ছিল না।কিছু না কিছুই না।গ্রহ,নক্ষত্র,উপগ্রহ,ব্ল্যাক হোল, সময়,স্থান,শক্তি,পদার্থ কিছুই ছিল না।চারদিকে ছিল শুন্যতা।নিরবতা।নিস্তব্ধতা।যেখানে নেই কোন স্থান।এমনকি নেই কোন সময়।এটি এমনই নেই অবস্থা যার কোন  কল্পনা করাও সম্ভব নয়।


আমাদের আগে সাধারণভাবে এটা কিন্তু বুঝতে হবে যে কোন কিছু খালি থাকা মানেই কিন্তু একেবারে খালি থাকা নয়।আর তা আমরা কোন কিছু নিচে পড়া থেকে বোঝাতে পারি।যেমন ধরেন একটি পাথর ও একটি ময়ুরের পাখা দুটিই হাত থেকে নিচে একসাথে ছেড়ে দেই।তবে কোনটি মাটিতে আগে পড়বে?

আমাদের সাধারণ জ্ঞান অনুযায়ী আমরা দেখি, পাথর আগে পড়বে।কারণ পাথর যে অনেক ভারী আর ময়ুরের পালক যে হালকা!!


কিন্তু আমাদের এই পর্যবেক্ষণ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ভুল। প্রাচীনকালে গ্রীসের মধ্যে থাকা প্লেটোর ছাত্র এরিস্টটল ও কিন্তু এমনই মনে করত।আর এই চিন্তাই বছরের পর বছর চলতে থাকে যে কোন বস্তু ভারী(তুলনামূলক ভরযুক্ত) বলেই তা দ্রুত আর হালকা(তুলনামূলক ভরহীন) বলে তা ধীরে ধীরে নিচে পড়ে।


কিন্তু এটি যে তিনি ভুল করে ফেললেন।আর এই ভুল।ভাঙলেন গ্যালিলিও।তিনি  Experriment করে Theoratically এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে কোন বস্তু এই ভারী হলে ধীরে ও হালকা হলে ধীরে পড়ে ব্যাপারটি তা নয়।আসলে ব্যাপারটি ঘটে ঘর্ষনের কারণে।


এখানে বাতাসের ঘর্ষনের কারণে কোন বস্তুতে বেশী ও কোন বস্তুকে কম ঘর্ষন হয়।কারণ পৃথিবীর অভিকর্ষ বল টানে নিচের দিকে।আর এই নিচে টানাকে বাধা দেয় বাতাস।কম বাধা দিলে দ্রুত নিচে পড়ে যায়।আর বেশী বাধা দিলে সহজে পড়ে না।


আর হ্যা,বন্ধুরা এই পরীক্ষাটিই করা হয়েছিল বাতাস বের করে ল্যবরেটরির ভেতরে।যেটাকে ভ্যাকুয়াম টিউব ও বলা হয়।সেখানে দেখা গেছে পাথর ও ময়ুরের পাখা একসাথে ছেড়ে দিলে তা একসাথে একই সময়ে মাটিতে পড়ে।


হ্যা এখানে আমি শুন্যতার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি। যেখানে বাতাস নেই।আপাতত এটাকে শুন্য ধরতে পারি।যেমন পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের বাইরে স্পেস এ তো বাতাস নেই।তাই বলে কি সেটি শুন্য(মানে কিছুই নেই)?তাও কিন্তু না।এই স্পেসের চারপাশে যে কোন না কোন Object আছে।হতে পারে তা উল্কাপিন্ড, গ্রহ,নক্ষত্র ইত্যাদি।আর এর ফলে তো স্পেস-টাইম Curvature  তৈরী হয়ে গেল।আর ফলে তৈরী হবে Gravity(কারণ নিউটনের সূত্র অনুযায়ী এখানে আকর্ষন বল তথা মহাকর্ষ বল যে তৈরী হবেই হবে)  .যার ফলে উচ্চ ভর‍যুক্ত বস্তুকে কেন্দ্র করে  নিম্ন ভরের বস্তুগুলো ঘুড়তে থাকবে।ও হো! শেষে স্পেসে গিয়ে শুন্যতা(কিছুই নেই)খুজতে গিয়ে যে এখানেও পেলাম না।এখানেও Force কাজ করছে।


এরা কারণ টা কি বন্ধুরা? কারণ হলো এখন এই ভৌত জগতে পদার্থ ও শক্তির রাজত্ব।তাই সে অবস্থাটি দেখতে হলে আমাদের যেতে হবে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে!!!


তো লেখার প্রথমেই আমি বলেছিলাম যে তখন কিছুই ছিল না।কিন্তু প্রকৃতির যেন এক বেঁধে দেয়া নিয়ম হলো প্রকৃতি কখনো শুন্যতাকে জায়গা দিতে চায় না(আমাদের ভৌত ইন্দ্রিয় এমনটি সাক্ষী দেয়)।তো ওখানে কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন হচ্ছিল।অর্থাৎ কোন যায়গায় শুন্য থাকা মানে হলো সমান সংখ্যক এবং একে অপরের বীপরিত কোন কিছু হওয়া ও একে অপরকে কাটাকাটি করে আবার শুন্য হয়ে যাওয়া।আমরা যদি এই ঘটনার আরোও গভীরে যাই তবে দেখতে পাই যে শুন্যতাও শুন্য না।বরং সেখানে কোয়ান্টাম ফিল্ড রয়েছে।সেখানেও হচ্ছে এনার্জির খেলা।যেহুতু এই লেখার উদ্দেশ্য ফিজিক্স বোঝানো নয় তাই সেখানে যাচ্ছি না।


মানে একদিকে শুন্য থেকে হচ্ছিল প্রায় অসীম সংখ্যক Energy ও প্রায় অসীম সংখ্যক Anti energy.যেহুতু দু'টিই সমান পরিমানের এবং শক্তির মান একে অপরের বিপরীত তাই একে অপরকে ধ্বংশ করে দিচ্ছিল।আবার এই ধ্বংশ থেকে শুন্য হয়ে আবার এটি হচ্ছিল।একেই বলে কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন।


কিন্তু একসময় ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা।তখন শুন্য থেকে আবার Energy ও Anti-Energy সৃষ্টি হলো তো ঠিকই কিন্তু সমস্যাটা হলো কি  Energy level বেড়ে গেল বা Anti-Energy এর level কমে গেল তখনই আবার একে অপরকে কাটাকাটি করে শুন্য হতে পারল না।বরং বাড়তি গুলো থেকে গেল।অর্থাৎ চরম শুন্য অবস্থার সমাপ্তি ঘটল।


মানে এই মহাবিশ্বের বাইরে থেকে কেও শক্তি প্রয়োগ করেছে তা বোঝাই যাচ্ছে।কারণ আমরা নিউটনের ১ম সুত্র অনুযায়ী জানি যে স্থির বস্তু সর্বদা স্থির থাকে এবং গতিশীল বস্তু সর্বদা গতিশীল থাকে,যতক্ষন না বাইরে থেকে শক্তি প্রয়োগ করা হয়।এর মানে কি দ্বাড়ায়?এমন কোন শক্তি বাইরে থেকে নিশ্চয়ই হস্তক্ষেপ করেছে যার কারণে এই মহাবিশ্ব অস্তত্বে এসেছে।


এটাই ছিল সময়ের সবচেয়ে আদি মুহুর্ত!এটি ছাড়া বিশ্বব্রম্ভাণ্ডে আর কিছুই নেই।তখন সেই বাড়তি শক্তি অর্থাৎ বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে Singularity। সেটি উচ্চ তাপ,চাপ ও ঘনমাত্রায় এমন এক অবস্থা ঘটল যে সেখানে ঐ Super Atom বিস্ফোরণ ঘটল।আর এটিই হলো The big bang! তখন থেকেই সবকিছুর যাত্রা শুরু।পুরো মহাবিশ্ব ওখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।


এটি ১৯২৪ সালের আগে আগে শুধুমাত্র থিউরী হিসেবে দেখা হলেও তা বর্তমানে এখন FACT।কারণ ১৯২৪ সালে বিজ্ঞানী হাবল তার টেলিস্কোপে দেখতে পান যে গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে দূরে সড়ে যাচ্ছে।অর্থাৎ নিশ্চয়ই এমন এক সময় ছিল যখন সবকিছু একত্রে ছিল।যাকে বলে super atom.সেখান থেকে বিস্ফোরনের মাধ্যমে সকল কিছু আলাদা হয়ে পড়ে।

হ্যা, একেই বলে বিগ ব্যাং।


এই থিওরী আমাদেরকে এটাই বলে যে, একসময় মহাবিশ্বের সকল বস্তু একত্রিতভাবে ছিল এরপর এক মহা বিষ্ফোরণ হয়। ফলে সকলকিছু আলাদা হয়ে যায় আস্তে আস্তে তৈরি হয় মহাবিশ্ব। 


এখন বন্ধুরা,কোরআন কি বলে আমাদের এটা দেখব।

কোরআন সত্য প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানের সাহায্য নেয়ার কোন দরকার নেই।কোরআন নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ।আমাদের মুসলিমদের কাজ হলো  কোরআনের প্রতিটি কথাকে অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করা।কিন্তু যারা বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে কোরআন কে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে সে কলাবিজ্ঞানী নাস্তিকদের উত্তর দেয়ার জন্য আমার এই লেখা একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠা।


 বিগব্যাং থিওরির সাথে কুরআনের এক আয়াতের অনেক মিল পাওয়া যায়।সূরা আম্বিয়া ২১ নং সূরার ৩০ নং আয়াত- 


30] أَوَلَم يَرَ الَّذينَ كَفَروا أَنَّ السَّمٰوٰتِ وَالأَرضَ كانَتا رَتقًا فَفَتَقنٰهُما ۖ وَجَعَلنا مِنَ الماءِ كُلَّ شَيءٍ حَىٍّ ۖ أَفَلا يُؤمِنونَ

  


Have not those who disbelieve known that the heavens and the earth were joined together as one united piece, then We parted them? And We have made from water every living thing. Will they not then believe?


অবিশ্বাসীরা কি ভাবিয়া দেখেনা আকাশমন্ডলি ও পৃথিবী পরষ্পর মিশে ছিলো? আমি উহাকে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সকল কিছুকে সৃষ্টি করলাম পানি হতে।এর পরেও কি তাহারা বিশ্বাস স্থাপন করবেনা?


এতো সংক্ষেপে এতো সুন্দর ব্যখ্যা দেখেও আমাদের মহাজ্ঞানী(মহা মূর্খ) কলাবিজ্ঞানীগন সন্তুষ্ট নন। তারা বলে এখানে আকাশের উপাদান গ্রহ নক্ষত্র এসব না বলে আকাশ মিশেছিলো কেন বলা হলো? আবার তারা প্রশ্ন করে এখানে বিস্ফোরণের কথা বলা নেই। (মানে তারা বিস্ফোরণ শব্দটিও চায়)।


তারা আসলে এমন কথা বলে কারণ তারা কুরআন অনুসারে আকাশের ব্যাখ্যাটিই জানেনা। যদি আকাশ না বলে গ্রহ নক্ষত্র বলা হতো তবে কুরআনের আরো কিছু আয়াত প্রশ্নবিদ্ধ হতো।কুরআন ভূল প্রমাণিত হয়ে যেত।এখানে সবচাইতে উপযুক্ত শব্দ আকাশ, আকাশের উপাদান নয়। আমার এ কথা বলার পিছনে কিছু কারণ আছে। এই ঘটনা ঘটার আগে কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী আকাশ কেমন ছিলো আর বর্তমানে কেমন আছে এ বিষয়টি বোঝা প্রয়োজন।আমি আয়াতগুলো পরে দেবো তার আগে কুরআন থেকে বর্ণনা করবো।


যখন আকাশ মন্ডলি এবং পৃথবীকে পৃথক করা হলো তখন বর্তমানে ৭ আসমান মিশে ছিলো একত্রে অর্থাৎ ৭ টা মিলে একটি ছিলো এবং এর সাথে পৃথিবীও মিশে ছিলো।আর আমরা যে আসমানকে চন্দ্র সূর্য এবং অন্য তারকা রাজীর অবস্থিত স্থান বলে গণ্য করি তা কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী ১ম আসমান।কারণ আল্লাহ বলেন তিনি নিকটস্থ আকাশকে সুসভীত করেছেন প্রদিপমালা দ্বারা।অর্থাৎ যতদূর নক্ষত্ররাজি আছে সব প্রথম আসমান। আল্লাহ যদি এখানে আকাশমন্ডলি না বলে শুধু আকাশের উপাদান গ্রহ নক্ষত্র বোঝাতেন তবে কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনা এমন দাড়াতো যে "প্রথম আসমানের উপাদান এবং পৃথিবী পরষ্পর মিশে ছিলো আমি উহাকে পৃথক করে দিলাম"। কিন্তু কুরআন বলে শুধু প্রথম আসমান নয় ২ থেকে ৭ আসমান ও মিশে ছিলো। অর্থাৎ সকল আসমানকে মিশে থাকতে হলে আকাশমন্ডলি কথাটিই সর্বাধিক উপযোগী।এতে প্রথম আসমান ও এর উপাদানগুলোও বাকি আসমানের সাথে মিশে আছে এমন অর্থ প্রকাশ করে।প্রথম আসমান + এর ভিতরের বস্তুও মিশে আছে + ২ থেকে ৭ আসমান ও মিশে আছে। এক্ষেত্রে কুরআনের ভূল নেই বরং কলাবিজ্ঞানীদের (নাস্তিক) বোঝার ভূল। তারা অন্য আয়াতগুলোর সাথে মিলিয়ে বোঝার চেষ্টা করেনা।


এবার আরেকটি বিষয় তুলে ধরবো যে বিস্ফোরণ এর কথা কোথায় আছে। 


এখানে বিস্ফোরণ কথা থাকার প্রয়োজন নেই বিস্ফোরণের মাধ্যমে কি কাজ সম্পাদিত হলো তা থাকাই যথেষ্ট।অর্থাৎ বস্তুগুলো আলাদা হয়ে যাওয়া। কিন্তু এর পরেও একটি আয়াত থেকে এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। 


 ثُمَّ استَوىٰ إِلَى السَّماءِ وَهِىَ دُخانٌ فَقالَ لَها وَلِلأَرضِ ائتِيا   طَوعًا أَو كَرهًا قالَتا أَتَينا طائِعينَ


অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।


[11] Then He rose over (Istawâ) towards the heaven when it was smoke, and said to it and to the earth: "Come both of you willingly or unwillingly." They both said: "We come, willingly."


আকাশে ধোয়া আসলো কোথা থেকে তা চিন্তা করেছেন?এর উৎস কি? নিশ্চই উত্তপ্ত কোনোকিছুর বিস্ফোরণের মাধ্যমেই এর আবির্ভাব ঘটেছিলো।আর বিজ্ঞান ও এখন স্বীকার করে যে মহাবিশ্বের আদি অবস্থায় মহাবিশ্বে গ্যাসীয় অবস্থান বিদ্যমান ছিল।সেখান থেকে পরবর্তীতে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে নক্ষত্রের উৎপন্ন হয়।


এখন বলতে পারেন ৭ আসমান/৭ টি ভিন্ন ভিন্ন স্তর এগুলো রুপকথার গল্প মাত্র। 


উত্তর:সাত আসমানকে টেনে আনার উদ্দেশ্য এটা বোঝানো যে কুরআনের ব্যখ্যা সম্পূর্ণ সঠিক এবং বিজ্ঞানের উর্ধে গিয়ে যেহেতু ৭ আসমানের বর্ণনা করা হয় তাই এর সাথে সামঞ্জস্য রাখতে আকাশমণ্ডলী শব্দ ব্যবহার করা আবশ্যক ছিলো।  যেহেতু বিজ্ঞান প্রথম আসমানের গন্ডি পার কর‍তে পারেনি এবং পারবেও না কখনো তাই এ কথা বলা ভিত্তিহীন যে কুরআনের সাত আসমানের বর্ণনা সঠিক নয়। 


এবার আয়াতগুলো দিয়ে আমি শেষ করছিঃ


] أَوَلَم يَرَ الَّذينَ كَفَروا أَنَّ السَّمٰوٰتِ وَالأَرضَ كانَتا رَتقًا فَفَتَقنٰهُما ۖ وَجَعَلنا مِنَ الماءِ كُلَّ شَيءٍ حَىٍّ ۖ أَفَلا يُؤمِنونَ

 


[30] Have not those who disbelieve known that the heavens and the earth were joined together as one united piece, then We parted them? And We have made from water every living thing. Will they not then believe?


(Surah Al anbiya)


যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখেনা যে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে  তবুও কি তারা বিশ্বাস করবেনা?(সূরা আম্বিয়া আয়াত ৩০) 


11] ثُمَّ استَوىٰ إِلَى السَّماءِ وَهِىَ دُخانٌ فَقالَ لَها وَلِلأَرضِ ائتِيا طَوعًا أَو كَرهًا قالَتا أَتَينا طائِعينَ


[12] فَقَضىٰهُنَّ سَبعَ سَمٰواتٍ فى يَومَينِ وَأَوحىٰ فى كُلِّ سَماءٍ أَمرَها ۚ وَزَيَّنَّا السَّماءَ الدُّنيا بِمَصٰبيحَ وَحِفظًا ۚ ذٰلِكَ تَقديرُ العَزيزِ العَليمِ


[11] Then He rose over (Istawâ) towards the heaven when it was smoke, and said to it and to the earth: "Come both of you willingly or unwillingly." They both said: "We come, willingly."

 

12] Then He completed and finished from their creation (as) seven heavens in two Days and He made in each heaven its affair. And We adorned the nearest (lowest) heaven with lamps (stars) to be an adornment as well as to guard (from the devils by using them as missiles against the devils). Such is the Decree of Him the All-Mighty, the All-Knower.


(surah fussilat :11-12)


11] অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।


12] অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত 

আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।


(সূরা ফুসসিলাত ১১-১২)


29] هُوَ الَّذى خَلَقَ لَكُم ما فِى الأَرضِ جَميعًا ثُمَّ استَوىٰ إِلَى السَّماءِ فَسَوّىٰهُنَّ سَبعَ سَمٰوٰتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيءٍ عَليمٌ

[29] তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।

[29] He it is Who created for you all that is on earth. Then He rose ove (Istawâ) towards the heaven and made them seven heavens and He is the All-Knower of everything.


(Surah bakara:29)


পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। একিসাথে তিনি আকাশের প্রতি মনসংযোগ করেন, অতঃপর সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।(সূরা বাকারা আয়াত ২৯)


এত কিছু দেখানোর পরেও নাস্তিক কলাবিজ্ঞানীরা বলবে যে এই মহাবিশ্বের কোন স্রষ্টা নেই।অথচ এই মহাবিশ্বে তাকালেই বোঝা যায় এই জগত সৃষ্টিকর্তা ছাড়া টিকতেই পারবে না।এই জগত তো বিগ ব্যাং তথা মহাবিস্ফোরনের মাধ্যমে হয়েছে তাই না? আচ্ছা আপনি কি দেখেছেন যে কোন অ্যাকসিডেন্ট হলে বা কোন এলোমেলো ঘটনাতে সুন্দর ডিজাইন হতে? কখনো দেখেছেন যে হাত থেকে গ্লাস পড়ে গেলে সেই পড়ে যাওয়া গ্লাস থেকে কাচের বাটি তৈরী হয়ে যেতে? নিশ্চয়ই না।


কিন্তু এই মহাবিশ্ব একটা ডিজাইনার থাকার ব্যাপারে সাক্ষী দেয়।এই মহাবিশ্ব এতটাই ম্যাথমেটিক্যালি এক্যুরেট যে সামান্য হেরফের হলেও এই মহাবিশ্ব ধ্বংশ হয়ে যেত।কোন জীবের উৎপত্তি সম্ভব হতো না।এগুলো প্রমাণ করে যে এই মহাবিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আছেন।যেমন উদাহারণ হিসেবে বলা যায়:-


সবল নিউক্লিয় বলের কাজ হলো পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রনকে ধরে রাখা। দেখা গেছে, এর মান মাত্র ৫% এদিক-সেদিক হলেই প্রাণের উৎপত্তি অসম্ভব হয়ে পড়ত। তা ছাড়া সবল নিউক্লিয় বলের ক্ষেত্রে কাপলিং ধ্রুবক এর মান মাত্র ০.৫% কম-বেশি হলেই প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব হয়ে পড়ত।।


• তড়িৎচৌম্বক বল ও মাধ্যাকর্ষণ বলের অনুপাত ১০০০: ১ না হয়ে মাধ্যাকর্ষণ বল যদি সামান্যতম কম বা বেশি হতো, তবে মহাবিশ্বের উৎপত্তি হতো না। আরও দেখা গেছে, তড়িৎচৌম্বক বল সামান্যতম কমবেশি হলেই জীবনের বিকাশ অসম্ভব হয়ে পড়ত।।*। তা ছাড়া তড়িৎচৌম্বক বলের ক্ষেত্রে কাপলিং ধ্রুবক এর মান মাত্র ৪% কমবেশি হলেই প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব হতো না।


• আমরা জানি প্রতিটি পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস আর বাইরে বিভিন্ন কক্ষপথে ইলেক্ট্রন ঘুরে বেড়ায়। দেখা গেছে ইলেকট্রনের চার্জ যদি সামান্যতমও হেরফের হতো, তা হলে আজকের প্রাণ সম্ভব হতো না। পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবার প্রোটন আর নিউট্রনে গঠিত। দেখা গেছে, নিউট্রনের ওজন প্রোটনের ওজনের মাত্র ০.১% বেশি না হলে এটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যেত, ফলে প্রাণের অস্তিত্ব থাকত না।


• এবার আমাদের পৃথিবীর দিকে তাকানো যাক। সৌরজগতে পৃথিবীর অবস্থানকে বিজ্ঞানীরা একটা গালভরা নাম দিয়েছেন-গোল্ডিলকস জোন (Goldilocks Zone), মানে অনুকূল এলাকা (Habitable Zone)। অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বটা এমন যে, পৃথিবীর তাপমাত্রা খুব বেশি গরমও না, আবার ঠান্ডাও না, ফলে পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে-যা প্রাণের জন্য আবশ্যক। এই অবস্থান থেকে সামান্য নিকটে বা দূরে গেলেই গন্ডগোল হয়ে যেত। 


• বৃহস্পতি গ্রহ: আমাদের সৌরজগতে থাকা গ্যাস দৈত্য  বৃহস্পতি মহাজাগতিক ঢালের মতো কাজ করে, অসংখ্য ধূমকেতু, উল্কা শুষে নিয়ে পৃথিবীকে রক্ষা করে। ভূগোলবিদ প্রফেসর পিটার ওয়ার্ড তো বলেই ফেলেছেন যে, জুপিটার না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণ না থাকার সম্ভাবনাই বেশি ছিল।


রেফারেন্স:-


১. John Leslic, Universes; p. 4, 35 (New York: Routledge, 1989); Anthropic Cosmo- logical Principle; p. 322 (Oxford: Oxford University Press, 1985)


২. H. Oberhummer, A. Csótó, and H. Schlatti, "Stellar Production Rates of Carbon and Its Abundance in the Universe," Science 289 (2000): 88-90


৩. Paul Davis, The Goldilocks Enigma: Why the Universe is Just Right for Life; Chapter 7: A Universe Fit for Life (Epub Edition, Mariner Books 2008)


৪. John Leshe, "How to Draw Conclusions from a Fine-Tuned Cosmos" in Physics, Philosophy and Theology: A Common Quest for Understanding; p. 299 (Vatican City State: Vatican Observatory Press, 1988)


৫. Stephen Hawking. A Brief History of Time; Chapter 8: The Origin and Fate of the Universe (Epub Edition, Bantham Books, 10th anniversary edition)

Comments

Popular posts from this blog

আজকের বিষয়:- খারেজ্বীদের উৎপত্তি এবং এর অন্তিম পরিণতি হযরত আলী(রা:) কে হত্যা

সিফফিনের যুদ্ধ।

আহলে বায়াতের মর্যাদা