কারবালার ঘটনা



পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

আজকের বিষয়:-কারবালার ঘটনা

হাদীসের সংকলন:-খেলাফতে রাশিদা পতনের কারণ(পর্ব ১০)


📝লেখক:- শহীদুল ইসলাম সাজ্জাদ।


আলোচনা পর্ব:------>>>


কুফার মানুষ ক্রমাগত চিঠি পাঠাতে থাকে যে কেও ইয়াজিদ এর বায়াত চায় না।সবাই ইমাম হুসাইন এর বায়াত চান।এইজন্য উনি মদিনা হতে মক্কা।এরপর মক্কা হতে ওমরা করে কুফায় যাত্রা করেন।


মক্কা হতে কুফায় যেতে ১ মাস অতিক্রান্ত হয়ে যায়।মহররম মাস এসে পড়ে।উনি রওনা দেয়ার আগে ওনার চাচাতো ভাই মুহাম্মদ বিন আকিল কে পাঠান পরিস্থিতি ঠিক আছে কিনা দেখে আসার জন্য।বিন আকিল কুফায় এসে দেখেন পরিস্থিতি ঠিক আছে।তাই উনি ইমাম হুসাইন কে চিঠি লিখে জানান যে সব ঠিক আছে।


কিন্তু পথিমধ্যে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া এটা খবর পেয়ে যায় হুসাইন কুফায় রওনা দিয়েছে।এজন্য সে ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে গভর্নর নিয়োগ দিয়ে কুফায় পাঠায়। ওবায়দুল্লাহ কুফায় এসে সকল কুফার মানুষকে ভয় দেখাতে থাকে যে যেই হুসাইন বিন আলী এর বায়াত করবে তাকে হত্যা করা হবে।এই বলে তারা মুহাম্মদ বিন আকিলকে হত্যা করে। খুব দু:খের ব্যাপার হলো এই কাহিনী বিন আকিল ইমাম হুসাইন রা: কে চিঠি লিখে জানাতে পারেন নি।


এইদিকে ইমাম হুসাইন (রা:) তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রওনা দিতে দিতে মুহররমে কুফার কাছে পৌছান।কুফাতে ওনাকে ঢুকতে দেয়া হলো না।এরপরে উনি তার পাশে কারবালাতে আসেন।ওখানে তাকে আটকে ফেলা হয়।কারণ ইয়াজিদ এটা আগেই জানতে পেরে সে ওবায়দুল্লাহ এর নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী পাঠায়।


ওখানে ইমাম হুসাইন(রা:) এর সাথে ইয়াজিদ বাহিনীর আলোচনা হয়।ইয়াজিদ বাহিনী বলে যে তাকে ইয়াজিদের বায়াত হতেই হবে।


ইমাম হুসাইন(রা:) ছিলেন সৈরতন্ত্র ও অত্যাচারীদের বিরোধী।ইয়াজিদের সৈরতন্ত্র এর জন্য ইয়াজিদকে খলিফা মেনে নিতে  ইমাম হুসাইন অস্বীকৃতি জানালো।তাছাড়া ইয়াজিদ বসেছে তার বাবার মাধ্যমে প্রাপ্ত রাজতন্ত্র দ্বারা।অথচ ইয়াজিদের বাবা  মুয়াবিয়া ইমাম হাসান(রা:) কে শর্ত দিয়েছিল যে সে খেলাফত অনুযায়ী 

শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করবেন।অথচ উনি করলেন না।উনাইয়ারা ইমাম হাসান কে চক্রান্ত করে বিষ দিয়ে হত্যা করল।আর মুয়াবিয়া ইমাম হাসান এর চুক্তি ভঙ্গ করে তার পুত্র কে ক্ষমতা দান করল।যা আমি পুর্বের পর্বে রেফারেন্স সহ আলোচনা করেছি।


ইমাম হুসাইন  কে তারা বলে দেয় যে ইয়াজিদের অন্ধ আনুগত্য না করলে তাদের হত্যা করা হবে।এটি বলে তারা ফোরাত নদীর পানি বন্ধ করে দেয়।


তাবুতে আগুণ লাগিয়ে দেয়।একে একে পানির অভাবে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন নবী পরিবার।ইমাম হুসাইন(রা:) তার ছয় মাসের বাচ্চা(আলি আজগর) কে কোলে নিয়ে তাদের কাছে পানি চেয়েছিলেন।অথচ তীর দিয়ে বাবার কোলের সন্তানকে ইয়াজিদ সেনা হত্যা করে।


ইমাম হুসাইন এর ভাই আব্বাস পানির জন্য ফোরাত নদীর তীরে যান।ওনাকে পানি আনতে দেয়া হয় নি।ওনার ডান হাত কাটা হয়।পানির মশক বাম হাতে নেন।বাম হাত কাটা হয়।মুখে নেন।এরপরে হাজারো তীর মেরে তাকে ঘোড়া থেকে ফেলে দেয়া হয়।ঐদিকে ইমাম হুসাইন এর মেঝো ছেলে  আলি আকবর বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে শহীদ হন।ইমাম হুসাইন এর ভাতিজা আল কাসেম(ইমাম হাসান এর ছেলে) যুদ্ধে শহীদ হন।ইয়াজিদ সেনা নামাজের মাঝে পর্যন্ত তীর মারতে থাকে।এইভাবে সৈন্য নীহত হতে থাকে।পরিশেষে পুরুষদের মধ্যে ইমাম হুসাইন এর বড় ছেলে সাজ্জাদ অবশিষ্ঠ থাকে।আর ইমাম হুসাইন একা।ইমাম সাজ্জাদ  চরম অসুস্থতার জন্য যুদ্ধ করতে পারেন নি।


কারবালার মাঠে একে-একে যখন সবাই শাহাদাত 

বরণ করছেন এবং ইমাম হোসাইন (রাঃ)

তখন কেবল একা দাড়িয়ে ছিলেন

 

ইমাম হুসাইন(রা:) একটি ভাষণ দিলেন।তখন কিছু দ্বীনের দাওয়াত দিলেন।যাতে তারা ভুল পথ হতে ফিরে আসে।এগুলো তারিখের কিতাবের মধ্যে পাবেন।আমি আমার ভাষায়  সংক্ষিপ্ত রুপে কিছু তুলে বলছি : 


“কেন আমাকে হত্যা করতে চাও..??

আমি কি কোন পাপ অথবা অপরাধ করেছি..??"


ইয়াজিদের সৈন্য বাহিনী বোবার মত দাড়িয়ে রইল। 


পুনরায় ইমাম হুসাইন (রাঃ) বললেন,


 “আমাকে হত্যা করলে আল্লাহর-কাছে কি জবাব দেবে..??"

কি জবাব দেবে বিচার দিবসে প্রিয় (সাঃ) নবীর কাছে..??"


এজিদের সৈন্য বাহিনী পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে!

আবার ইমাম হোসাইন (রাঃ) বললেন,


আমাদের সাহায্য করার মত কি তোমাদের মাঝে একজনও নাই..?? 


তারপরের আহ্বানটি সাংঘাতিক মারাত্বক!!


ঐতিহাসিকদের মতে এটাই ইমাম হুসাইন (রাঃ) শেষ আহ্ববান!


"‘আমার কথা কি শুনতে পাও না..??

তোমাদের মাঝে কি মাত্র একজন মুসলমানও নাই..??"


সমস্ত কারবালা নিরব-নিস্তব্ধ হয়ে গেলো!


কারবালার ঘটনা এত কষ্টের যে যদি হৃদয় কেটে ফেলে যতটুকু ব্যথা লাগে তার চাইতেও বেদনাদায়ক।


‘ইমাম হুসাইন (রা:)আসল এবং নকলের ভাগটা পরিস্কার করে দেখিয়ে গেলেন’ 

সে রকমই অর্থ বহন করছে ইমাম হুসাইন (রাঃ)এর শিক্ষায়।


কারন, ইয়াজিদের সৈন্য বাহিনীতে একজন

হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান অথবা অন্য কোন ধর্মের কেউ ছিল না!সবাই ছিল মুসলমান!সব নামমাত্র মুসলমান।


তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন যে, যারা দাঁড়িয়ে আছে 

তারা সবাই নামমাত্র মুসলমান।যাদের উপরের লেবাসেই ইসলামের আদর্শ।নয়তো যাকে জান্নাতের যুবকদের সরদার বলে ঘোষণা রাসুল( সা:) করেছেন(১)।তার গর্দানে ছুড়ি চালাতে পারত না।


  চতুর্দিক থেকে অসংখ্য তীর ইমাম হুসাইনের উপর বৃষ্টির মতো তীর পড়তে থাকে।ইমাম হুসাইন তীর দ্বারা ক্ষত বিক্ষত হতে থাকেন।একটা সময় ইমাম হুসাইন ঘোড়া থেকে পড়ে যান।তারপরে শিমার এসে ইমাম হুসাইনকে জবাই করে হত্যা করে।এতে ইয়াজিদ সেনারা খুশীতে আত্নহারা হয়ে গেল।


যেদিন ইমাম হুসাইন মারা যান ঐদিন মদিনাতে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস(রা:) স্বপ্নে দেখেন যে নবিজী অনেক দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে  রক্ত সংরক্ষণ করছেন।উনি কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলেন যে এটা হুসাইন ও তার সঙ্গীদের রক্ত।আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে সময় লিখে রাখেন।কারণ নবিজী (সা:) যেহুতু স্বপ্নে এসেছেন তা মিথ্যা হতে পারে না।পরবর্তীতে উনি জানতে পারেন ঠিক ঐদিনেই ইমাম হুসাইন(রা:) শহীদ হয়েছেন।(২)


ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে তার মাথা ওবায়দুল্লাহ এর কাছে চলে যায়।ওবায়দুল্লাহ এটি দেখে ইমাম হুসাইন এর মাথাকে খোচাতে থাকে আর তাকে কটুক্তি করে।(৩)


আহলে বায়াতকে ঘৃণা করে শুধু দিনরাত সিজদাহ দিয়ে মুমিন হওয়া যায় না।যতই নেককার হও না কেন।আল্লাহর কসম!আহলে বায়াতের মহব্বত ছাড়া সেই নেক তুচ্ছ!তুচ্ছ!তুচ্ছ!কেও সারাজীবন হাতিমে কাবা তে নামাজ পড়লেও কিছুই হবে না তার পরিণতি জাহান্নাম।যদি সে আহলে বায়াত(নবীর পরিবার) এর উপর বিদ্বেষ করে থাকে।এই কথা নবিজী (সা:) বলেছেন।(৪)


অপরদিকে নবিজীর স্ত্রী গণ যখন ইমাম হুসাইন হত্যার খবর জানতে পারেন তখন সেই হত্যাকারীদেরকে লানত(অভিশাপ দিলেন)।(৫)অথচ এখনকাল কিছু কাটমোল্লারা বলে  ইয়াজিদ সেনাকে লানত দেয়া যাবে না!যেখানে রাসুল (সা:) হাসান হুসাইনকে চুমু দিয়ে বলতেন যে কিনা তাদের ভালোবাসে সে আমাকেও ভালোবাসে। যে তাদের ঘৃণা করে সে আমাকেও ঘৃণা করে।(৬)মানে বোঝাই যাচ্ছে ইয়াজিদ সেনা ইমাম হুসাইন রা: কে মেরে নবি সা: এর ই ঘৃণা আদায় করল।ঐতিহাসিকরা একমত যে ইমাম হুসাইন (রা:) এর হত্যাকারীদেরকে ইয়াজিদ কোন শাস্তি দেয় নি।


ওমর (রা:) এর ছেলে আবুদল্লাহ কে ইরাকবাসী মশা মাছি এহরাম অবস্থায় মারা যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করে।আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা: আফসোস ভরা কষ্ট নিয়ে  জবাব দেন যে এরা  হুসাইন রা: কে ই মেরে এসেছে আর মশা মাছি মারার মাস'আলা জিজ্ঞাসা করে।(৭)


সাহাবীরা এই ঘটনার পরে এত কষ্ট পেলেন তা একটি উদাহারণ দিলে বোঝা যায়।এক সাহাবী বলেন যে আম নবীর পাশেই যেতে লজ্জাবোধ করতাম যদি আমি হুসাইন হত্যার অন্তর্ভুক্ত হতাম।(৮)


ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার খেলাফতের পরে মুখতার আল সাকাফি বলে একজন লোক ক্ষমতায় আসেন যে ছিল আহলে বায়াত ভক্ত।সে ইমাম হুসাইন হত্যাকারীদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড দেন।মৃত্যুর পরে যখন ওবায়দুল্লাহর মাথা রাখা হয় তখন দেখা গেলো একটি সাপ এসে ঐসব মাথাসমূহের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছিল। এমনকি সাপটি 'উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদের নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করল, তারপর বের হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।(৯)মানে এই ওবায়দুল্লাহ যে জাহান্নামী হবে এটা বোঝাই যাচ্ছে।তার ব্যাপারে এই পর্ব এর শুরুর দিকে কথা বলেছি।সহজ করতে আবার বলি। সে হলো ইয়াজিদের নিয়োগ দেয়া চামচা।যাকে ইয়াজিদ গভর্নর বানিয়েছিল ইমাম হুসাইনকে কুফায় আসতে বাধা দিতে।


হাদীস পর্ব----->>>>


১)হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমার মা আমাকে প্রশ্ন করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তুমি কখন যাবে? আমি বললাম, আমি এতদিন হতে তাঁর নিকট উপস্থিত পরিত্যাগ করেছি। এতে তিনি আমার উপর নারাজ হন। আমি তাকে বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে আমাকে মাগরিবের নামায আদায় করতে ছেড়ে দিন। তাহলে আমি তাঁর কাছে আমার ও আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করব। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমি হাযির হয়ে তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। তারপর তিনি নফল নামায আদায় করতে থাকলেন, অবশেষে তিনি এশার নামায আদায় করলেন। তারপর তিনি বাড়ির দিকে যাত্রা করলেন এবং আমি তাঁর পিছু পিছু গেলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি কে, হুযাইফাহ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমার কি দরকার, আল্লাহ তা'আলা তোমাকে এবং তোমার মাকে ক্ষমা করুন। তিনি বললেনঃ একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ্ তা'আলার কাছে অনুমতি চেয়েছেনঃ ফাতিমাহ জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা। মুসতাদরাক লিল হাকিমের বর্ণনায়: 'আব্দুল্লাহ বিন মাস'উদ বর্ণনা করেন যে আল্লাহর রসূল বলেছেন: "হাসান এবং হুসাইন জান্নাতি পুরুষদের সর্দার হবে এবং তাদের বাবা এর চেয়েও ওপরে থাকবে" (জামি' তিরমিজী: ৩৭৮১, শায়খ

যুবায়ের 'আলী যাঈ এবং আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। মুসতাদরাক লিল হাকিম: ৪৭৭৯, সিলসিলা সহীহাহ: ৭৯৬, ইমাম হাকিম, যাহাবী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]


২)আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বর্ণনা করেন: আমি (স্বপ্নে) দেখলাম আল্লাহর রসুলকে এক দ্বিপ্রহরে, ধুলামলিন অবস্থায়, আর দেখলাম তাঁর সাথে একটি বোতল, যা ছিল রক্তে পূর্ণ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: "হে আল্লাহর

রসূলা এটি কী?" আল্লাহর রসূল বললেন: "এটি হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীগণের রক্ত, যা আমি আজ সকালে সংগ্রহ করেছি।" 'আম্মার বর্ণনা করেন: "আমাদের মনে আছে সেই দিনের কথা এবং পরবর্তীতে আমরা অবলোকন করলাম যে এটিই সেই দিন, যেদিন তিনি কতল হয়েছিলেন। [মুসনাদ আহমাদ: ২১৬৫ (১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪২), শু'আাইব আরনাউৎ এবং যুবায়ের 'আলী যাই এই সনদকে বিশুদ্ধ বলেছেন


৩)আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, 'উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদের সামনে হুসাইন (রাঃ)- এর মস্তক আনা হল এবং একটি বড় পাত্রে তা রাখা হল। তখন ইবনু যিয়াদ তা খুঁচাতে লাগল এবং তাঁর রূপ লাবণ্য সম্পর্কে কটূক্তি করল। আনাস (রাঃ) বললেন, হুসাইন (রাঃ) গঠন ও আকৃতিতে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবয়বের সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। তাঁর চুল ও দাড়িতে ওয়াসমা দ্বারা কলপ লাগানো ছিল। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি ইবনু যিয়াদের নিকট হাজির ছিলাম। সে সময় আল-হুসাইন (রাঃ)-এর শির (কারবালা হতে) এনে হাজির করা হল। সে তাঁর নাকে ছড়ি মারতে মারতে (ব্যঙ্গোক্তি করে) বলতে লাগলো, এর ন্যায় সূত্রী আমি কাউকে তো দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় আমি বললাম, সতর্ক হও! লোকদের মাঝে (দৈহিক কাঠামোয়) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আল-হুসাইন ইবনু 'আলীর তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিল না। [সহীহ বুখারী: ৩৭৪৮, জামে' আত-তিরমিজি: ৩৭৭৮, শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ এবং আলবানী বলেন, এর সনদ সহীহ)


৪)হাকিমের বর্ণনায়: 'আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লাহ বলেছেন: হে 'আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানেরা! আমি মহান আল্লাহর কাছে তোমাদের ব্যাপারে ৩টি জিনিস চেয়েছি। তিনি যেন তোমাদের অন্তরকে অটল রাখেন, তোমাদের ভেতর পথভ্রষ্টদের পথ প্রদর্শন করেন এবং তোমাদের অজ্ঞদেরকে জ্ঞান দান করেন। সাথে সাথে আমি এই দু'আও করেছি যেন তিনি তোমাদেরলে দানশীল, সাহসী ও দয়ালু করেন। কোনও ব্যক্তি যদি কালো পাথর এবং মাকামে ইবরাহীমের মাঝে দাড়িয়েও সলাত আদায় করে, সিয়াম পালন করে, অথচ তার অন্তরে যদি আল্লাহর নবীর পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ থাকে, তবে সে অবশ্যই জাহান্নামে যাবে। [মুসতাদরাক লিল হাকিম: ৪৭১৭, ৪৭১২, সিলসিলা সহীহাহ: ২৪৮৮, ইমাম হাকিম, যাহাবী, আলবানী, যুবায়ের

"আলী যাঈ ফাযায়েলে সাহাবা তে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]


৫)শাহর বিন হাউশাব বর্ণনা করেন: আমি আল্লাহর নবীর স্ত্রী, মুসলিম জাতির মা উম্মে সালামার ব্যাপারে শুনেছি, যখন হুসাইন বিন 'আলীর শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছালো, তিনি ইরাকীদেরকে লা'নত করলেন এবং বললেন: “তারা তাঁকে হত্যা করেছে, মহান আল্লাহ যেন তাদের হত্যা করেন। প্রথমত, তারা তাঁকে ধোকা দিয়েছে এবং অপমানিত করেছে, মহান আল্লাহ তাদের ওপর লা'নত করেন। আমি নিজেই আল্লাহর রসুলকে দেখেছি, এক প্রভাতে ফাতিমা নিজে রান্না করে একটি আসিদা (এক প্রকার মিষ্টি)-র পাত্র নিয়ে আসলেন। তিনি একটি পাত্রে করে তা তাঁর সামনে রাখলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: "তোমার চাচার ছেলে কোথায়?" তিনি জবাব দিলেন: "সে বাসায়"। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “যাও এবং তাকে আর তার দুই সন্তানকেও ডেকে নিয়ে এসো"। উম্মুল মুমিনীন, উম্মে সালামাহ বর্ণনা করেন যে, তিনি (ফাতিমা) তাঁদের দুইজনকে হাত ধরে নিয়ে আসেন এবং 'আলী বিন আবী তালিব তাঁদের পেছন পেছন আসেন। যখন তাঁরা সবাই চলে আসলেন, তিনি তাঁদের দুইজনকে নিজের কোলের ওপর বসালেন। 'আলী ইবনু আবী তালিব বসলেন ডান পাশে এবং ফাতিমা বসলেন বাম পাশে। উম্মুল মুমিনীন উম্ম সালামা বর্ণনা করেন, আল্লাহর রসূল আমার থেকে খায়বারী চাদরটি নিলেন, যাতে আমরা ঘুমাতাম। তিনি সেই চাদরে সবাইকে জড়িয়ে নিলেন, চাদরের এক মাথা তাঁর বাম হাতে ধরলেন এবং তাঁর ডান হাত মহান প্রতিপালকের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন: "হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত (পরিবারের সদস্য), আপনি তাদেরকে অপরিচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত করুন এবং তাদেরকে যথাযথভাবে পবিত্রতা দান করুন।" তিনি একই শব্দে এই দু'আ তিনবার করলেন। উম্মু সালামা বর্ণনা করেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: "হে আল্লাহর রসুল। আমি কি আপনার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নই।" তিনি উত্তর করলেন: "কেন নয়? তুমিও চাদরের ভেতর চলে এসো"। উন্মু সালামা বর্ণনা করেন: "আমিও চাদরের ভেতর প্রবেশ করলাম, কিন্তু তিনি ততক্ষণে তাঁর চাচাত ভাই আলী, তাঁর নাতিবর্গ, তাঁর কন্য ফাতিমার জন্য দু'আ করেই ফেলে দিয়েছেন" (মুসনাদ আহমাদ: ২৬৫৯২ (৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯৮), শায়খ যুবায়ের আলী ফাজায়েলে

সাহাবা তে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]


৬)এত আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন যে আল্লাহর নবী হাসান এবং হুসাইনকে কাঁধে নিয়ে আমাদের সাথে বের হয়ে আসলেন, তাদের দুইজনকে একটু পর পর চুমু দিতে লাগলেন। একসময় তিনি আমাদের কাছে আসলেন এবং একজন বলে উঠল: “হে আল্লাহর রসুল। আপনি কি তাদের ভালবাসেন?" তিনি জবাব দিলেন: "হ্যাঁ! যে ব্যক্তি তাদের ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসল, যে তাদের ঘৃণা করে সে আমাকেই ঘৃণা করল" [আল মুসতাদরাক লিল হাকিম: ৪৭৭৭, ইমাম হাকিম, যাহাবী, যুবায়ের আলী যাঈ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন


৭)'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাকে ইরাকের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইহরামের অবস্থায় মশা-মাছি মারা যাবে কি? তিনি বললেন, ইরাকবাসী মশা-মাছি মারা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে অথচ তারা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাতিকে হত্যা করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আমার নিকট দুনিয়ার দুটি ফুল। তিরমিজীর বর্ণনায়। উসামাহ্ ইবনু যাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক রাতে আমার কোন দরকারে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে, একটা কিছু তাঁর পিঠে জড়ানো ছিল যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার দরকার সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কি? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উন্মুক্ত করলে দেখা গেলো তাঁর দুই কোলে হাসান ও হুসাইন (রাঃ)। তিনি বললেন, এরা দু'জন আমার পুত্র এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ্। আমি এদের দু'জনকে মুহাব্বাত করি। সুতরাং তুমি তাদেরকে মুহাব্বাত কর এবং যে ব্যক্তি এদেরকে মুহাব্বাত করবে, তুমি তাদেরকেও মুহাব্বাত কর। তিরমিজীর অপর এক বর্ণনায়: ইয়া'লা ইবনু মুররাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুসাইন আমার হতে এবং আমি হুসাইন হতে। যে লোক হুসাইনকে মহাব্বত করে, আল্লাহ্ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হুসাইন। [সহিহ বুখারী: ৩৭৫৩, জামি' তিরমিজী: ৩৭৬৯ ও ৩৭৭৫, যুবায়ের আলী যাই ও আলবানী হাদিসের সনদকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন।


৮)ইবরাহিম নাখাঈ বর্ণনা করেন: “যদি আমি হুসাইনের হত্যাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম, তারপর আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিতেন এবং আমি জান্নাতে যেতাম, তবুও আমি আল্লাহর নবীর পাশ দিয়ে যেতে লজ্জা পেতাম যে, যদি তিনি আমার দিকে তাকান" (মু'জামুল কাবীর তাবারানী: ২৮২৯, ফাজায়েলে সাহাবা গ্রন্থে

শায়খ যুবায়ের আলী যাই হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)


৯)এ উমারাহ ইবনু 'উমাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, 'উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ ও তার সাথীদের ছিন্ন মস্তক এনে কুফার আর-রাহবা নামক জায়গায় মাসজিদে স্তূপীকৃত করা হলে আমি সেখানে গেলাম। সে সময় লোকেরা এসে গেছে, এসে গেছে বলে চেঁচামিচি করতে লাগলো। দেখা গেলো একটি সাপ এসে ঐসব মাথাসমূহের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছিল। এমনকি সাপটি 'উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদের নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করল, তারপর বের হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। লোকেরা আবারও চিৎকার করে বলতে লাগলো, এসে গেছে, এসে গেছে। এরুপে সাপটি দু'বার অথবা তিনবার এসে তার নাকের ছিদ্রে ঢুকে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর বের হয়ে যায়। [জামে আত-তিরমিজি: ৩৭৮০, ইমাম তিরমিজি ও শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]

Comments

Popular posts from this blog

আজকের বিষয়:- খারেজ্বীদের উৎপত্তি এবং এর অন্তিম পরিণতি হযরত আলী(রা:) কে হত্যা

সিফফিনের যুদ্ধ।

আহলে বায়াতের মর্যাদা