আহলে বায়াতের মর্যাদা



আহলে বায়াতের মর্যাদা

হাদীসের সংকলনঃ-খেলাফতে রাশিদা পতনের পেছনের
কারণ(১ম পর্ব)

লেখকঃ-শহীদুল ইসলাম সাজ্জাদ।


সবাইকে আমার লেখায় স্বাগতম।এটি আমার গবেষণাকৃত শুধুমাত্র সহিহ হাদীসের সমষ্টি।যা কারবালার কাহিনীর পেছনের কারণ বুঝতে সাহায্য করবে।
সমস্ত বর্ণনাসমূহ আহলুস সুন্নাহের বর্ণনা থেকে নেয়া হয়েছে।আর হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে আমি যেই রেফারেন্স দিয়েছি সেই ক্রম হারামাইন ও দারুস সালামের আন্তর্জাতিক ক্রমানুসরণ নেয়া হয়েছে।অর্থাৎ,আপনি রেফারেন্স চেক করতে চাইলে গুগলে ইংরেজীতে কিতাবের নাম ও ক্রম লিখে সার্চ দিবেন।ইনশাল্লাহ,হাদীস এসে হাজির হবে।
আজকের পর্বে শুধুমাত্র আমার লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে কথা হবে।যে কেন আমি কারবালার পেছনের গল্প লিখতে চাচ্ছি=>>>
১) যেহুতু এই বিষয়েয়ে মোটামুটি জানি তাই আমার দায়িত্ব যে আমি যা জানি তা সবার মাঝে পৌছে দেয়া।কেননা আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন,
নিশ্চয়ই যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়েতের কথা নাযিল করেছি মানুষের জন্য কিভাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণের ও। [সুরা বাকারা: ১৫৯]
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক এমন ইলম (জ্ঞান) সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় যা সে জানে, অতঃপর সে তা গোপন করে, তাকে কিয়ামাতের দিবসে আগুনের লাগাম পরানো হবে। [জামে আত-তিরমিজি: ২৬৪৯, সুনান আবী দাউদ ৩৬৫৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬১, মিশকাতুল মাসাবীহ ২২৩। শায়খ যুবাইর আলী যাঈ এবং শায়খ আলবানী হাদিসের সনদকে সহীহ বলেছেন]
২)রাসুলুল্লাহ (সা:)তার নাতিদের কতটা বেশী ভালোবাসতেন তা এই হাদীসগুলো পড়লে জানতে পারবেন।ওনারা যে মারা যাবেন তা এখানে রাসুলুলুল্লাহ সা: অনেক আগেই ভবিষ্যৎবানী করে রেখেছিলেন। মোহাম্মদ(সা:) ওহীর মাধ্যমে তা জানতে পারেন।আর সহীহ হাদীসের অসংখ্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে রাসুলের আহলে বায়াতকে যারা ঘৃণা করে তারা জাহান্নামী।রাসুলুল্লাহ সা: ই দোয়া করেছেন যে যারা তাদের ভালোবাসে আল্লাহ ও যেন তাদের ভালোবাসেন।এই বিষয়ের সপক্ষে আমি নিচে হাদীসের দলিল উপস্থাপন করেছি।
অতএব তাদের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের শত্রুদের ঘৃণা করা আমাদের ঈমানের অংশ।কারণ তাদের প্রতি ভালোবাসা ও ঘৃণা করার উপর জান্নাত জাহান্নামের ফয়সালা হচ্ছে।
পরবর্তী পর্বতে তাদের শত্রু কারা তা সহীহ হাদীসের আলোকে উপস্থাপন করা হবে।নবীর পরিবারের রেখে যাওয়া আদর্শ কি ছিল এবং কেন তাদের মারা হলো?এর পেছনের কাহিনী কি তা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
কিন্তু কারবালার কাহিনী শুরু করার আগে কেন এই কাহিনী জানা প্রয়োজন তা আগে জানা দরকার।এর মূল্য ইসলামে কতটুকু তা বোঝানোর আজকের ১ম পর্বের উদ্দেশ্য।
চলুন আহলে বায়াত কারা তা কোরআন থেকে দেখি:--->>
وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاهِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی وَ اَقِمۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتِیۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ اَطِعۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیُذۡهِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَهۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَهِّرَکُمۡ تَطۡهِیۡرًا ﴿ۚ۳۳﴾و قرن فی بیوتکن و لا تبرجن تبرج الجاهلیۃ الاولی و اقمن الصلوۃ و اتین الزکوۃ و اطعن الله و رسولهٗ انما یرید الله لیذهب عنکم الرجس اهل البیت و یطهرکم تطهیرا ﴿ۚ۳۳﴾
আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর। হে আহলে বায়াত, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব:৩৩)
এই আয়াত নাযিল হওয়ার পরে নবিজী সা: যা করলেন:-
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে বের হলেন। তাঁর গায়ে ছিলো কাল পশম দ্বারা খচিত একটি পশমী চাঁদর। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনি তাঁকে চাঁদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনিও তার সঙ্গে (চাদরে) ঢুকে পড়লেন। ফাতিমা (রাঃ) এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। অতঃপর আলী (রাঃ) এলেন, তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। পরে বললেনঃ হে আহলে বাইত! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে বিদুরিত করে তোমাদের অতিশয় পবিত্রময় করতে চান।(সহীহ মুসলিম,ই:ফা:-৬০৪৩,আন্তর্জাতিক:-৬২৬১)
সুতরাং এটি পরিষ্কার যে কোরান আহলে বায়াত শব্দের অর্থ দ্বারা বিশেষ করে আলী রা:,ফাতিমা রা: হাসান রা: ও হুসাইন রা: কে বোঝানো হয়েছে।নবিজী সা: চাদরে শুধু তাদেরকেই আবৃত করে তা পরিষ্কার করে দিলেন।কোরানের অনুযায়ী তারা সকল পাপ হতে মুক্ত ও পবিত্র।
তো চলুন আহলে বায়াতের শানে হাদীসগুলো দেখে আসি:------->>>>>
১)হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমার মা আমাকে প্রশ্ন করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তুমি কখন যাবে? আমি বললাম, আমি এতদিন হতে তাঁর নিকট উপস্থিত পরিত্যাগ করেছি। এতে তিনি আমার উপর নারাজ হন। আমি তাকে বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে আমাকে মাগরিবের নামায আদায় করতে ছেড়ে দিন। তাহলে আমি তাঁর কাছে আমার ও আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করব। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমি হাযির হয়ে তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। তারপর তিনি নফল নামায আদায় করতে থাকলেন, অবশেষে তিনি এশার নামায আদায় করলেন। তারপর তিনি বাড়ির দিকে যাত্রা করলেন এবং আমি তাঁর পিছু পিছু গেলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি কে, হুযাইফাহ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমার কি দরকার, আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে এবং তোমার মাকে ক্ষমা করুন। তিনি বললেনঃ একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে অনুমতি চেয়েছেনঃ ফাতিমাহ জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা। মুসতাদরাক লিল হাকিমের বর্ণনায়: "আব্দুল্লাহ বিন মাস'উদ বর্ণনা করেন যে আল্লাহর রসূল বলেছেন: “হাসান এবং হুসাইন জান্নাতি পুরুষদের সর্দার হবে এবং তাদের বাবা এর চেয়েও ওপরে থাকবে" [জামি' তিরমিজী: ৩৭৮১, শায়খযুবায়ের আলী যাঈ এবং আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। মুসতাদরাক দিল হাকিম: ৪৭৭৯, সিলসিলাসহীহাহ ৭৯৬, ইমাম হাকিম, যাহাবী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
২) আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাকে ইরাকের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইহরামের অবস্থায়। মশা-মাছি মারা যাবে কি? তিনি বললেন, ইরাকবাসী মশা-মাছি মারা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে অথচ তারা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাতিকে হত্যা করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আমার নিকট দুনিয়ার দুটি ফুল। তিরমিজীর বর্ণনায় উসামাহ ইবনু যাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক রাতে আমার কোন দরকারে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে, একটা কিছু তাঁর পিঠে জড়ানো ছিল যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার দরকার সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কি? তিনি পরিধেয় বস্তু উন্মুক্ত করলে দেখা গেলো তাঁর দুই কোলে হাসান ও হুসাইন (রাঃ)। তিনি বললেন, এরা দু'জন আমার পুত্র এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ! আমি এদের দু'জনকে মুহাব্বাত করি। সুতরাং তুমি তাদেরকে মুহাব্বাত কর এবং যে ব্যক্তি এদেরকে মুহাব্বাত করবে, তুমি তাদেরকেও মুহাব্বাত কর। ভিরমিজার অপর এক বর্ণনায়: ইয়ালা ইবন মুররাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুসাইন আমার হতে এবং আমি হুসাইন হতে। যে লোক হুসাইনকে মহাব্বত করে, আল্লাহ্ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হুসাইন।
বুখারী: ৩৭৫৩,জামি তিরমিজী:- ৩৭৬৯,৩৭৭৫ যোবায়ের আলী ও আলবানী হাদিসের সনদকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন]
৩)আব্দুল্লাহ বিন নুযাই, তার পিতা আবু আব্দুল্লাহ হতে বর্ণনা করেন, যিনি "আলী বিন আবী তালিবের 'উযুর পাত্র বহন করতেন। তিনি বলেন যে তিনি আলী বিন আবী তালিবের সাথে সফর করছিলেন, এমন: সময় তিনি সিফফীনের প্রান্তরে পৌঁছলেন এবং বললেন: “হে আবু আব্দুল্লাহ! ফুরাতের সীমানায় ধৈর্য রেখ।” আমি বললাম: “কী হয়েছে, হে আমীরুল মুমিনীন? আলী বিন আবী তালিব বললেন: "আমি একদিন আল্লাহর নবীর কাছে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর চোখ থেকে পানি ঝরছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: কেউ কি আপনাকে কষ্ট দিয়েছ? আপনার চোখ কেন অশ্রুসিক্ত? আল্লাহর রসুল বললেন না। বরং জিবরাঈল কিছুক্ষণ আগেই আমার কাছে এসেছিলেন এবং তিনি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে হুসাইন কে ফুরাতের তীরে হত্যা করা হবে।" অতপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “তুমি কি দেখতে চাও কোন স্থানে হুসাইন এর দেহ পতিত হবে?” আমি বললাম: “জি, আমাকে দেখতে দিন।” তিনি একমুঠো ধুলো উঠিয়ে নিলেন আর আমি আমার কান্না রাখতে পারলাম না। [মুসনাদ আহমাদ: ৬৪৮ (১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৫) শায়াখ যুবায়ের আলী যাঈ তার
ফাজায়েলে সাহারা গ্রন্থে হাদিসটিকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন
৪). "আব্দুল্লাহ বিন নুযাই, তার পিতা আবু আব্দুল্লাহ হতে বর্ণনা করেন, যিনি "আলী বিন আবী তালিবের 'উযুর পাত্র বহন করতেন। তিনি বলেন যে তিনি আলী বিন আবী তালিবের সাথে সফর করছিলেন, এমন: সময় তিনি সিফফীনের প্রান্তরে পৌঁছলেন এবং বললেন: “হে আৰু আব্দুল্লাহ! ফুরাতের সীমানায় ধৈর্য রেখ।” আমি বললাম: “কী হয়েছে, হে আমীরুল মুমিনীন? আলী বিন আবী তালিব বললেন: "আমি একদিন আল্লাহর নবীর কাছে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর চোখ থেকে পানি ঝরছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: কেউ কি আপনাকে কষ্ট দিয়েছ? আপনার চোখ কেন অশ্রুসিক্ত? আল্লাহর রসুল বললেন না। বরং জিবরীল কিছুক্ষণ আগেই আমার কাছে এসেছিলেন এবং তিনি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে হুসাইন কে ফুরাতের তীরে হত্যা করা হবে।" অতপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “তুমি কি দেখতে চাও কোন স্থানে হুসাইন এর দেহ পতিত হবে?” আমি বললাম: “জি, আমাকে দেখতে দিন।” তিনি একমুঠো ধুলো উঠিয়ে নিলেন আর আমি আমার কান্না রাখতে পারলাম না। [মুসনাদ আহমাদ: ৬৪৮ (১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৫) শায়াখ যুবায়ের আলী যাঈ তার
ফাজায়েলে সাহারা গ্রন্থে হাদিসটিকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন
৫) শাহর বিন হড়িশার বর্ণনা করেন: আমি আল্লাহর নবীর মুসলিম জাতির মা উম্মে সালামার ব্যাপারে শুনেছি, যখন হুসাইন বিন আলীর শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছালো, তিনি ইহুদীদেরকে লানত করলেন এবং বললেন, "তারা তাঁকে হত্যা করেছে, মহান আল্লাহ যেন তাদের হত্যা করেন। প্রথমত, তারা তাঁকে ধোকা দিয়েছে এবং অপমানিত করেছে, মহান আল্লাহ তাদের ওপর লা'নত করেন। আমি নিজেই আল্লাহর রসুলকে দেখেছি, এক প্রভাতে ফাতিমা নিজে রান্না করে একটি আলিনা (এক প্রকার মিষ্টি)- | একটি পাত্রে করে তা তাঁর সামনে রাখলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমার চাচার ছেলে কোথায়?" তিনি জবাব দিলেন: “সে বাসায়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন; “যাও এবং তাকে আর তার দুই সন্তানকেও ডেকে নিয়ে এসো”। উন্মুল মুমিনান, উম্মে সালামাহ বর্ণনা করেন যে, তিনি(ফাতিমা) তাঁদের দুইজনকে হাত ধরে নিয়ে আসেন এবং আলী বিন আবী তালিব তাঁদের পেছন পেছন আসেন। যখন তাঁরা সবাই চলে আসলেন, তিনি তাদের দুইজনকে নিজের কোলের ওপর বসালেন। আলী ইবনু আবী তালিব বসলেন ডান পাশে এবং ফাতিমা বসলেন বাম পাশে। উম্মুল মুমিনীন উন্মু সালামা বর্ণনা করেন, আর আমার থেকে বারবারী চাদরটি নিলেন, যাতে আমরা ঘুমাতাম। তিনি সেই চাদরে সবাইকে জড়িতে নিলেন, চাদরের এক মাখা তাঁর নাম হাতে ধরলেন এবং তাঁর ডান হাত মহান প্রতিপালকের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন: “হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত (পরিবারের সদস্য), আপনি তাদেরকে অপরিচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত করুন এবং তাদেরকে যথাযথভাবে পবিত্রতা দান করুন।" তিনি একই শব্দে এই মুদ্রা তিনবার করলেন। সালামা বর্ণনা করেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: হে আল্লাহর রসূল। আমি কি আপনার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নই
রাসুলুলুল্লাহ সা: বললেন: “কেন না? তুমিও চাদরের ভেতর চলে এসো। উম্মু সালামা বর্ণনা করেন: “আমিও চাদরের ভেতর প্রবেশ করলাম, কিন্তু তিনি ততক্ষণে তাঁর চাচাত ভাই আলী, তাঁর নাতিবর্গ, তাঁর কন্য ফাতিমার জন্য দুআ করেই ফেলে দিয়েছেন" (মুসনাদে আহমদ ২৬৫৯২
শানরে আলী ফাজাযে সাহাবা যে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)
৬) আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন যে আল্লাহর নবী হাসান এবং হুসাইনকে কাঁধে নিয়ে আমাদের সাথে বের হয়ে আসলেন, তাদের দুইজনকে একটু পর পর চুমু দিতে লাগলেন। একসময় তিনি আমাদের কাছে আসলেন এবং একজন বলে উঠল, “হে আল্লাহর রসুলা আপনি কি তাদের ভালবাসেন?” তিনি জবাব দিলেন: “হ্যাঁ। যে ব্যক্তি তাদের ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসল, যে তাদের ঘৃণা করে সে আমাকেই ঘৃণা করল" মুসতাদরাক গিল হাকিম: ৪৭৭৭, ইমাম হাকিম, হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন |
৭) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সন্তুষ্টি তাঁর পরিবারবর্গের (প্রতি সদাচরণের) মাধ্যমে অর্জন কর। জামি তিরমিযি ও মুসতাদরাক দিল হাকিমের বর্ণনায়: ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্ তা'আলাকে মহব্বত কর। কেননা তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিয়ামাতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহ তা'আলার মহব্বতে তোমরা আমাকেও মহব্বত এবং আমার মহব্বতে আমার আহলে বাইতকেও মহব্বত কর। [সহীহ বুখারী: ৩৭৫১, জামে আত-তিরমিজি: ৩৭৮৯, শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, মুসতাদরাক দিল হাকিম: ৪৭১৬, ইমাম হাকিম ও যাহাবী বলেন: এর সনদ সহীহ]
৮) আবূ হুরায়রা বর্ণনা করেন যে আল্লাহর নবী হাসান এবং হুসাইনকে কাঁধে নিয়ে আমাদের সাথে বের হয়ে আসলেন, তাদের দুইজনকে একটু পর পর চুমু দিতে লাগলেন। একসময় তিনি আমাদের কাছে আসলেন এবং একজন বলে উঠল: “হে আল্লাহর রসুল! আপনি কি তাদের ভালবাসেন?" তিনি জবাব দিলেন: “হ্যাঁ। যে ব্যক্তি তাদের ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসল, যে তাদের ঘৃণা করে সে আমাকেই ঘৃণা করল" | আল মুসতাদরাক লিল হাকিম: ৪৭৭৭, ইমাম হাকিম, যাহাবী, যুবায়ের আলী যাঈ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]
৯)মুসতাদরাক হাকিমের বর্ণনায়: "আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লাহ বলেছেন: হে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানেরা! আমি মহান আল্লাহর কাছে তোমাদের ব্যাপারে ৩টি জিনিস চেয়েছি। তিনি যেন তোমাদের অন্তরকে অটল রাখেন, তোমাদের ভেতর পথভ্রষ্টদের পথ প্রদর্শন করেন এবং তোমাদের অজ্ঞদেরকে জ্ঞান দান করেন। সাথে সাথে আমি এই দু'আও করেছি যেন তিনি তোমাদেরলে দানশীল, সাহসী ও দয়ালু করেন। কোনও ব্যক্তি যদি কালো পাথর এবং মাকামে ইবরাহীমের মাঝে দাড়িয়েও সলাত আদায় করে, সিয়াম পালন করে, অথচ তার অন্তরে যদি আল্লাহর নবীর পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ থাকে, তবে সে অবশ্যই জাহান্নামে যাবে। [মুসতাদরাক দিল হাকিম: ৪৭১৭, ৪৭১২, সিলসিলা সহীহাহ ২৪৮৮, ইমাম হাকিম, যাহানী, আলবানী, যুবায়ের "আলী যাঈ ফাযায়েলে সাহারা তারা হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]
গাদিরে খুমের হাদীস:-
১০)ইয়াযীদ ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি, হুসায়ন ইবনু সাবরাহ এবং 'উমার ইবনু মুসলিম- আমরা যায়দ ইবনু আকরাম (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। যখন আমরা তাঁর নিকট বসি তখন হুসায়ন (রাঃ) তাকে বললেন, হে যায়দ! আপনি তো অনেক কল্যাণ লক্ষ্য করেছেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছেন, তাঁর হাদীস শ্রবণ করেছেন, তাঁর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর পেছনে সলাত আদায় করেছেন। আপনি অনেক কল্যাণ অর্জন করেছেন, যে যায়দ! আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে যা শ্রবণ করেছেন তা আমাদের বলুন। যায়দ (রাঃ) বললেন, ভাতুপুত্র আমার বয়স বেড়েছে, আমি পুরনো যুগের মানুষ। অতএব রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে যা আমি সংরক্ষণ করেছিলাম এর কিয়দংশ ভুলে গেছি। তাই আমি যা বলি তা গ্রহণ করো আর আমি যা না বলি সে সম্বন্ধে আমাকে কষ্ট দিও না। এরপর তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন মাক্কাহ্ ও মাদীনার মাঝামাঝি 'খুম্ম' নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে বক্তৃতা দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা শেষে ওয়ায-নাসীহাত করলেন। অতঃপর বললেন, হুঁশিয়ার, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ, অতি সত্ত্বরই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেস্তা আসবে, আর আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দিব। আমি তোমাদের নিকট ভারী দু'টো জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব। এতে হিদায়াত এবং আলোকবর্তিকা আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করো, একে শক্ত করে আঁকড়ে রাখো। তারপর তিনি কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। এরপর বলেন, আর দ্বিতীয়টি হলো আমার আহলে বায়ত। আর আমি আহলে বায়তের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। আহলে বায়তের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বায়াতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। হুসায়ন (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আহলে বায়ত কারা, হে যায়দ? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবিগণ কি আহলে বায়তের অধিভূক্ত নন? যায়দ (রাঃ) বললেন, বিবিগণও আহলে বায়তের অন্তর্ভূক্ত; কিন্তু আহলে বায়ত তাঁরাই তাঁর (মৃত্যুর) পর যাঁদের উপর যাকাত নেয়া নিষিদ্ধ। হুসায়ন (রাঃ) বললেন, এসব লোক কারা? যায়দ (রাঃ) বললেন, এরা আলী, আকীল, জা'ফার ও আব্বাস (রাঃ)-এর পরিবার-পরিজনেরা। হুসায়ন (রাঃ) বললেন, এদের সবা জন্য যাকাত গ্রহণ নাজায়িয? যায়দ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। অপর বর্ণনায়ঃ যায়দ ইবনু আরকাম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা তাঁর নিকট গিয়ে বললাম, আপনি তো অনেক কল্যাণ লক্ষ্য করেছেন, আপনি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পাশে ছিলেন, তাঁর পেছনে সালাত আদায় করেছেন। তারপর আবূ হাইয়্যানের হাদীসের অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু এ হাদীসে আছে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সাবধান। আমি তোমাদের মাঝে দু'টো ভারী জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। তন্মধ্য থেকে একটি আল্লাহর কিতাব এটি আল্লাহর রশি, যে এর অনুসরণ করবে হিদায়াতের উপর থাকবে আর যে একে ছেড়ে দেবে সে পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হবে। এ বর্ণনায় আরো আছে যে, আমরা বললাম, রসূলের আহলে বায়তের মাঝে কি তাঁর বিবিরা সংযুক্ত রয়েছেন? যায়দ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! স্ত্রীরা একটা সময় পুরুষদের সাথে থাকে, তারপর তাঁকে স্বামী তালাক দিলে সে তার পিতা এবং গোষ্ঠীর নিকট ফিরে যায়। আহলে বায়ত হলো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মূল বংশ এবং তাঁর স্বগোত্রীয়রা, যাঁদের জন্য নবীর ইন্তিকালের পর যাকাত গ্রহণ নিষিদ্ধ। তিরমিজীর বর্ণনায়ঃ আবু সারীহাহ্ অথবা যাইদ ইবনু আরক্কাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যার মাওলা (বন্ধু), 'আলীও তার মাওলা। ইবনু আবী আসেমের 'আস সুন্নাহ'-এর বর্ণনায়ঃ 'আলী ইবনু আবী তালিব (আ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাদিরে খুমে 'আলী ইবনু আবী তালিব (আ)-এর হাত ধরে তুলে দাঁড়িয়ে একটি খুৎবা দান করলেনঃ "হে লোকসকল! তোমরা কি সাক্ষ্য দাও যে আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা?" সকলে বলল, "কেন নয়!"। অতঃপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমরা কি সাক্ষ্য দাও যে তোমাদের ওপর আল্লাহ ও রাসূলের হক্ক তোমাদের জীবনের চেয়ে বেশি?" সকলে বলল, "কেন নয়!"। অতঃপর তিনি বললেন, "তাহলে, আমি যার মাওলা (বন্ধু), 'আলীও তার মাওলা"। সুনানুন নাসাঈ আল কুবরার বর্ণনায়ঃ আবু তুফাইল আমির বিন ওয়াসলা বর্ণনা করেন যে 'আলী ইবনু আবী তালিব (আ) লোকজনকে এক প্রান্তরে সমবেত করে বলেন, "আমি আল্লাহর ওয়াস্তে প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করছি, কে কে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে গাদিরে ঘুমের হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছে?" অনেক সাহাবী দাড়িয়ে গিয়ে সাক্ষ্য দিলেন যে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাদিরে ঘুমের দিন বলেছেনঃ "তোমরা জান যে, মুমিনদের ওপর আমি তাদের নিজেরদের চেয়ে বেশি অধিকার রাখি"। একথা বলার সময় তিনি 'আলী ইবনু আবী তালিবের হাত ধরেন এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ "আমি যার মাওলা, 'আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ্, আপনি তাঁকে ভালবাসুন যারা তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ রাখুন যারা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ রাখে।" আবূ তুফাইল আমির বিন ওয়াসলা বলেনঃ আমি সেখান থেকে চলে গেলাম, অতঃপর যাইদ বিন আরকামের সাথে সাক্ষাত করলাম এবং তাঁকে সব কিছু বললাম। তিনি বললেনঃ "তোমার কি এই ব্যাপারে সন্দেহ আছে? আমি স্বয়ং আল্লাহর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো বলতে শুনেছি"। মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায়ঃ আবূ তুফাইল আমির বিন ওয়াসলা (১১০ হিজরি শেষ সাহাবী) বর্ণনা করেন যে 'আলী ইবনু আবী তালিব (আ) লোকজনকে এক প্রান্তরে সমবেত করে বলেন, "আমি আল্লাহর ওয়াস্তে প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করছি, কে কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে গাদিরে ঘুমের হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছে? তারা যেন তা বর্ণনা করে"। ৩০ জন দাড়িয়ে গিয়ে সাক্ষ্য দিলেন যে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাদিরে ঝুমের দিন বলেছেনঃ "তোমরা জান যে, মুমিনদের ওপর আমি তাদের নিজেরদের চেয়ে বেশি অধিকার রাখি"। একথা বলার সময় তিনি 'আলী ইবনু আবী তালিবের হাত ধরেন এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ "আমি যার মাওলা, 'আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ্, আপনি তাঁকে ভালবাসুন যারা তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ রাখুন যারা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ রাখে।" আবূ তুফাইল আমির বিন ওয়াসলা বলেনঃ আমি সেখান থেকে চলে গেলাম, অতঃপর যাইদ বিন আরকামের সাথে সাক্ষাত করলাম এবং তাঁকে সব কিছু বললাম। তিনি বললেনঃ "তোমার কি এই ব্যাপারে সন্দেহ আছে? আমি স্বয়ং আল্লাহর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো বলতে শুনেছি"। মুসতাদরাক লিল হাকিমের বর্ণনায়ঃ যাইদ বিন আরকাম আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ "আমি তোমাদের কাছে দুটি ভারী বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি, আল্লাহর কিতাব ও আমার পরিবার। নিশ্চয়ই, দুইটি বস্তু একে অপরের থেকে পৃথক হবে না, যতক্ষণ না তাঁরা আমার সাথে হাউযে কাওসারে সাক্ষাৎ করে"। অপর বর্ণনায়ঃ আবু ছাবিত, আবু যার গিফারীর দাস বর্ণনা করেন, "আমি জামালের যুদ্ধে 'আলীর (রা) সাথে ছিলাম। পরে, যখন আম্মা 'আঈশা কে দেখলাম, আমার অন্তরে কিছু ঢুকে পড়ল, যা কিছু মানুষের অন্তরেও ঢুকের পড়েছিল যুহরের সলাতের সময়। সুতরাং, আমি আমীরুল মুমিনীনের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে গেলাম। যখন আমি একটু অবসর পেলাম, আমি আম্মা উম্মু সালামার (রা) কাছে গিয়ে বল্লামঃ আমি খাবারে জন্য আসি নি, বরং আমার পরিচয় হল, আমি আবু যার গিফারীর দাস"। তিনি বললেনঃ "স্বাগতম"। অতঃপর, আমি তাঁকে আমার ঘটনা শুনালাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ "কখন তোমার হৃদয় ওড়া শুরু করল?" আমি বললামঃ "আল্লাহ্ আমার অন্তরকে সুর্যাস্তের সময় স্বস্তি দিয়েছেন, কাজেই তা খাপ খাইয়ে নীল"। উম্ম সালামা বলেনঃ "চমৎকার! আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে স্বয়ং বলতে শুনেছিঃ 'আলী আছে কুরআনের সাথে, কুরআন আছে 'আলীর সাথে। নিশ্চয়ই, দুইটি বস্তু একে অপরের থেকে পৃথক হবে না, যতক্ষণ না তারা আমার সাথে হাউযে কাওসারে সাক্ষাৎ করে'। [সহিহ মুসলিম: ৬২২৫ ও ৬২২৮, জামি' তিরমিজীঃ ৩৭১৩, আস সুন্নাহ ইবনু আবী আসেমঃ ১১৫৮, সুনানুন নাসাঈ আল কুবরাঃ ৮৪৭৮, মুসনাদ আহমাদঃ ১৯৩২১ (৪র্থ খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা), যুবাইর 'আলী যাঈ, আলবানী, শু'আইব আরনাউৎ সনদটিকে সহীহ বলেছেন, মুসতাদরাক লিল হাকিমঃ ৪৭১১, ৪৬২৮, ইমাম হাকিম ও যাহাবী বলেনঃ সনদটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ]
তাবুক যুদ্ধের সময়ের হাদীস:-
১১)মুস'আব ইবনু সা'দ তাঁর পিতা (আবু ওয়াক্কাস) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুক যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা হন। আর 'আলী (রাঃ)-কে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত করেন। 'আলী (রাঃ) বলেন, আপনি কি আমাকে শিশু ও মহিলাদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি এ কথায় রাযী নও যে, তুমি আমার কাছে সে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হারুন যে মর্যাদায় মূসার কাছে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে হারুন (আঃ) নবী ছিলেন আর] আমার পরে কোন নবী নেই। মুসলিমের বর্ণনায়ঃ সা'দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'আলী (রাঃ)-কে বলেছেন: তুমি আমার কাছে তেমন যেমন মূসা (আঃ)-এর কাছে হারূন। তবে আমার পর আর কোন নবী আসবেন না। সা'ঈদ (রহঃ) বলেন, আমি মনে করলাম যে, হাদীসটি প্রত্যক্ষভাবে সা'দ (রাঃ) হতে শ্রবণ করি। অতএব আমি সা'দের সঙ্গে একত্রিত হলাম এবং 'আমির আমাকে যা বলেছে আমি তাকে বললাম। তিনি বলেলেন, আমি একথা শুনেছি। আমি বললাম, আপনি কি এ কথা শুনেছেন? তিনি দু'কানে দু'টো আঙ্গুল ঢুকিয়ে বললেন, হ্যাঁ শুনেছি, না শুনে থাকলে এ কান দু'টো বধির হয়ে যাবে। [সহিহ বুখারী: ৪৪১৬, সহিহ মুসলিম: ৬২১৭ ও ৬২১৮]
খায়বার যুদ্ধের সময়ের হাদীস:-
১২)সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যাঁর হাতে আল্লাহ্ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে এ পতাকা দেয়া হবে। যখন ভোর হল তখন সকলেই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট গিয়ে উপস্থিত হলেন। তাদেরর প্রত্যেকেই এ আশা করছিলেন যে পতাকা তাকে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি বললেন, 'আলী ইবনু আবু তালিব কোথায়? তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাকে আমার নিকট নিয়ে এস। যখন তিনি এলেন, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু'চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু'আও করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোন রোগই ছিল না। রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে পতাকাটি দিলেন। 'আলী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল। তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মত না হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বললেন, তুমি সোজা এগিয়ে যেতে থাক এবং তাদের আঙ্গিনায় পৌঁছে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দা'ওয়াত দাও। তাদের উপর আল্লাহর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে তাও তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমার দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়াত লাভ করে, তা হবে তোমার জন্য লাল রং এর উট পাওয়ার চেয়েও উত্তম। মুসলিমের বর্ণনায়ঃ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবারের দিন বললেনঃনিশ্চয়ই আমি ঐ লোকের হাতে পতাকা তুলে দিবো, যে লোক আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসে। তাঁর হাতেই আল্লাহ তা'আলা বিজয় দেবেন। 'উমার (রাঃ) বলেন, শুধু ঐ দিনটি ব্যতীত আমি কখনো নেতৃত্ব লাভে আশা করিনি। এ প্রত্যাশা নিয়ে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম, হয়ত এ কাজের জন্য আমাকে ডাকা হতে পারে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী ইবনু আবু তালিবকে ডেকে তাঁর হাতে পতাকা দিলেন এবং বললেনঃঅগ্রসহ হও, এদিক-ওদিক দৃষ্টি দিও না যতক্ষণ আল্লাহ তোমাকে বিজয় দেন। অতঃপর আলী (রাঃ) সামান্য অগ্রসর হয়ে থামলেন, এদিক-সেদিন দেখেনটি। এরপর চিৎকার করে বললেনঃহে আল্লাহর রসূল! কোন কথার উপর আমি লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করব। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে আর কোন ইলাহ নেই, আর নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল। যখনই তারা এ সাক্ষ্য প্রদান করবে তখনই তারা তাদের প্রাণ ও ধন-মাল তোমার হাত হতে মুক্ত করে ফেলবে। তবে কোন প্রাপ্য অধিকারের প্রশ্নে মুক্ত হবে না। আর তাদের হিসাব আল্লাহর নিকট। [সহিহ বুখারী: ৩৭০১, সহীহ মুসলিম: ৬২২২, ৬২২৩]
[আজ এ পর্যন্তই।২য় পর্ব পর্ব শুরু হবে আবু বকর রা: এর খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়া নিয়ে বুখারীর হাদীস ওবং এই বিষয়ে ওমর রা: এর দীর্ঘ বক্তব্য।তার সাথে থাকবে খেলাফত নিয়ে নবিজীর ভবিষ্যতবানীর হাদীস ।যা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়]

Comments

Popular posts from this blog

আজকের বিষয়:- খারেজ্বীদের উৎপত্তি এবং এর অন্তিম পরিণতি হযরত আলী(রা:) কে হত্যা

সিফফিনের যুদ্ধ।